বাংলা হাদিস

     [] সহিহ আবু দাউদ শরীফ

এর থেকে হাদিস সমূহ সংগৃহীত []




৪৫১। মুহাম্মাদ ইবন ইয়াহইয়া- আবদুল্লাহ্ ইবন উমার (রা) বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের যুগে মসজিদে নববী ইটের দ্বারা তৈরী ছিল এবং তার ছাদ ছিল খেজুর | গাছের ডাল ও গুড়ির দ্বারা তৈরী। মুজাহিদ বলেন, তার স্তম্ভগুলি ছিল শুকনা খেজুর গাছের। আবু বা সিদ্দীক (রা) তাতে কোন পরিবর্তন-পরিবর্ধন করেননি। উমার (রা) তার শাসনামলে তা কিছুটা প্রশস্ত করেন; কিন্তু তাঁর মূল ভিত্তি ছিল রাসুলুল্লাহ (স)-এর যুগে কাঁচা ইটের তৈরী | দেওয়াল ও খেজুর পাতার ছাউনীতে। তিনি স্তম্ভগুলি পরিবর্তন করেন। কিন্তু মূল বুনিয়াদের মধ্যেকোন পরিবর্তন করেননি। মুজাহিদ (রহ) বলেন, তার স্তম্ভগুলি ছিল শুকনা খেজুর গাছের। উছমান (রা)-র সময় তিনি তার পরিবর্তন-পরিবর্ধন করে তা অনেক প্রশস্ত করেন। তিনি কাঁচা ইটের পরিবর্তে নকশা খচিত প্রস্তর ও চুনা দ্বারা তার দেওয়াল নির্মাণ করেন এবং তার স্তম্ভগুলিও নকশা খচিত পাথর দ্বারা নির্মাণ করেন। তিনি সেগুন কাঠ দ্বারা (যা হিন্দুস্থানে পাওয়া যায়) এর ছাদ নির্মাণ করেন-(বুখারী)।



৪৫৪। মূসা ইবন ইসমাঈল-- আনাস ইবন মালেক (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মসজিদে নববীর স্থানটুকু বানু নাজ্জার গােত্রের বাগান ছিল। তথায় তাদের কৃষিক্ষেত্র, খেজুর বাগান ও মুশরিকদের কবর ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম তাদের নিকট মসজিদ নিমাণের উদ্দেশ্যে তা বিক্রির প্রস্তাব দিলে তারা বলেন, আমরা তা বিক্রি করতে চাই না (বরং দান করব)। তখন ঐ স্থানের খেজুর গাছগুলি কাটা হয়, ভূমি সমতল করা হয় এবং মুশরিকদের কবর খুঁড়ে তাদের গলিত অস্থিগুলি অন্যত্র সরিয়ে ফেলা হয়। অতঃপর রাবী পূর্বোক্ত হাদীছের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে রাবী এই হাদীছের মধ্যে ফানসুর” শব্দের পরিবর্তে ফাগফির” শব্দটির উল্লেখ করেছেন (অর্থ আপনি আনসার আর মুহাজিরদের ক্ষমা করুন)।




৪৮০। ইয়াহইয়া ইবন হাবীব--- আবু সাঈদ আল্-খুদরী (রা) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম খেজুর গুচ্ছের মূল পছন্দ করতেন এবং এর একটি অংশ প্রায়ই তাঁর হাতে থাকত। একদা তিনি মসজিদে প্রবেশ করে তার কিবলার দেওয়ালের দিকে শ্লেম্মা দেখতে পান এবং তিনি তা মুছে ফেলেন। অতঃপর তিনি সমবেত লােকদের প্রতি রাগান্বিত হয়ে বলেনঃ তােমাদের মধ্যে কারাে চেহারায় থুথু দিলে সে কি সন্তুষ্ট হবে? যখন তােমাদের কেউ নামাযের জন্য কিবলামুখী হয়ে দাঁড়ায় তখন সে যেন মহান আল্লাহ রবুল আলামীনের সম্মুখে দাঁড়ায় এবং ফেরেশতারা তার ডানদিকে অবস্থান করে। অতএব সে যেন ডান দিকে বা কিবলার দিকে থুথু না ফেলে। বরং সে যেন বাম দিকে অথবা পায়ের নীচে থুথু ফেলে। যদি থুথু ফেলার একান্তই প্রয়ােজন হয় তবে এইরূপে থুথু ফেলবে। রাবী বলেন, হযরত ইবন আজলান, আমাদেরকে নামাযের মধ্যে থুথু ফেলার পদ্ধতি বর্ণনা প্রসংগে বলেন, তােমরা কাপড়ের মধ্যে থুথু ফেলে। ঐ স্থান কচ্লাবে (অর্থাৎ কাপড়ের উক্ত স্থান অন্য স্থানের কাপড়ের সাথে মিশ্রিত করবে)।


৪৮১। ইয়াহইয়া ইবনুল ফাদল উবাদা ইবনুল ওয়ালীদ (রহ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা মসজিদে জাবের ইবন আবদুল্লাহ্ (রা)-র সাথে সাক্ষাত করতে আসি। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম খেজুর গুচ্ছের মূল হাতে নিয়ে মসজিদে আসেন। তিনি মসজিদে কিবলার দিকে শ্লেষ্ম দেখতে পেয়ে তথায় গিয়ে তা গুচ্ছের মূল দ্বারা খুচিয়ে উঠিয়ে ফেলেন। অতঃপর তিনি বলেনঃ তােমাদের মধ্যে কে পছন্দ করে যে, আল্লাহ তার দিক হতে মুখ ফিরিয়ে নিন? তােমাদের কেউ যখন নামাযে দাঁড়ায় তখন আল্লাহ পাক তার সামনে থাকেন। কাজেই নিজের সামনের দিকে ও ডান দিকে কেউ যেন থুথু নিক্ষেপ না করে, বরং প্রয়ােজন হলে বাম দিকে বা পায়ের নীচে যেন থুথু ফেলে। হঠাৎ যদি শ্লেষ্ম নির্গত হয় তবে সে যেন তা কাপড়ের মধ্যে ফেলে এবং পরে তা ঘষে ফেলে। অতঃপর নবী করীম (স) আবীর জাতীয় সুগন্ধি বা জাফরান আনতে বলেন। অতএব এক যুবক দ্রুত স্বীয় ঘরে গিয়ে সুগন্ধি দ্রব্য আনলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম তা নিয়ে গুচ্ছের কান্ডের মাথায় লাগিয়ে উক্ত স্থানে ঘষে দেন। জাবের (রা) বলেন, এরূপেই মসজিদে আতর বা সুগন্ধি দ্রব্য ব্যবহারের প্রচলন হয়েছে।



৪৯০। সুলায়মান ইবন দাউদ- হযরত আবু সালেহ আল-গিফারী (রহ) হতে বর্ণিত। একদা হযরত আলী (রা) বাবেল শহরে যান। তিনি সেখানে সফর করার সময় মুআযযিন এসে আসরের নামাযের আযান দেয়ার অনুমতি চায়। তিনি ঐ শহর ত্যাগ করে বাইরে এসে মুআযযিনকে ইকামতের নির্দেশ দিলে সে ইকামত দেয়। অতঃপর নামায শেষে তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে কবরস্থানে নামায আদায় করতে নিষেধ করেছেন। অনুরূপভাবে তিনি (স) বাবেল শহরেও নামায আদায় করতে নিষেধ করেছেন। কেননা ঐটা অভিশপ্তস্থান।





৪৯৮। আৰ্বাদ ইবন মূসা- আবু উমায়ের ইবন আনাস থেকে কোন একজন আনসার সাহাবীর সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম এজন্য চিন্তিত ও অস্থির হয়ে পড়েন যে, লােকদেরকে নামাযের জন্য কিরূপে একত্রিত করা যায়। কেউ কেউ পরামর্শ দেন যে, নামাযের সময় হলে ঝান্ডা উড়িয়ে দেওয়া হােক। যখন লােকেরা তা দেখবে তখন একে অন্যকে নামাযের জন্য ডেকে আনবে। কিন্তু তা নবী করীম (স)-এর মনপূতঃ হয়নি। অতঃপর কেউ এরূপ প্রস্তাব করে যে, শিংগা ফুকা হােক। যিয়াদ বলেন, শিংগা ছিল ইহুদীদের ধর্মীয় প্রতীক। কাজেই রাসূলুল্লাহ (স) তা অপছন্দ করেন। রাবী বলেন, অতঃপর একজন নাকুস’ ব্যবহারের পরামর্শ দেন। রাবী বলেন, উপাসনার সময় ঘন্টাধ্বনি করা ছিল নাসারাদের রীতি। এজন্য নবী করীম (স) তাও অপছন্দ করেন। অতঃপর কোন সিদ্ধান্ত ছাড়াই সেদিনের বৈঠক শেষ হয় এবং সকলে নিজ নিজ আবাসে ফিরে যায়। আবদুল্লাহ ইবন যায়েদ (রা)-ও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম চিন্তিত থাকার কারণে ব্যথিত হৃদয়ে স্বগৃহে প্রত্যাবর্তন করেন। অতঃপর তাঁকে স্বপ্নের মাধ্যমে আযানের নিয়ম শিক্ষা দেয়া হয়। বর্ণনাকারী বলেন, পরদিন ভােরে তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের খিদমতে হাযির হয়ে বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় ছিলাম। এমন সময় এক ব্যক্তি (ফেরেশতা) আমার নিকট এসে আমাকে আযান দেয়ার পদ্ধতি শিখিয়ে দিয়েছে। রাবী বলেন, হযরত উমার ইবনুল খাত্তাব (রা) ইতিপূর্বে ঠিক একই রকম স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু তিনি তা বিশ দিন পর্যন্ত প্রকাশ না করে গােপন রাখেন। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তিনি তা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের খিদমতে প্রকাশ করেন। তখন নবী করীম (স) তাঁকে (উমারকে) বলেনঃ এ সম্পর্কে পূর্বে আমাকে জ্ঞাত করতে তােমায় কিসে বাধা দিয়েছিল? উমার (রা) লজ্জা বিনম্র কণ্ঠে বলেন, আবদুল্লাহ ইবন যায়েদ (রা) এ ব্যাপারে অগ্রবর্তীর ভুমিকা পালন করেছেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বিলাল (রা)-কে নির্দেশ দেনঃ উঠ এবং আবদুল্লাহ ইবন যায়েদ | যেরূপ বলে- তুমিও তদ্রুপ (উচ্চ কন্ঠে) বল! এইরূপে বিলাল (রা) ইসলামের সর্বপ্রথম আযান ধ্বনি উচ্চারণ করেন। আবু বিশর বলেন, আবু উমায়ের আমাকে এরূপ বলেছেন যে, সম্ভবতঃ যদি এ সময় হযরত আবদুল্লাহ ইবন যায়েদ (রা) রােগগ্রস্ত না থাকতেন তবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম তাঁকেই মুআযযিন নিযুক্ত করতেন।\



 ৪৯৯। মুহাম্মাদ ইবন মানসূর-- আবদুল্লাহ ইবন যায়েদ (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম শিংগা ধ্বনি করে লােকদের নামাযের জন্য একত্র করার নির্দেশ প্রদান করেন তখন একদা আমি স্বপ্নে দেখি যে, এক ব্যক্তি শিংগা হাতে নিয়ে যাচ্ছে। আমি তাকে বলি, হে আল্লাহর বান্দা! তুমি কি শিংগা বিক্রয় করবে? সে বলে, তুমি শিংগা দিয়ে কি করবে? আমি বলি, আমি তার সাহায্যে নামাযের জামাআতে লােকদের ডাকব। "সে বলল, আমি কি এর চেয়ে উত্তম কোন জিনিসের সন্ধান তােমাকে দেব না? আমি বলি, হাঁ। রাবী বলেন, তখন সে বলল, তুমি এইরূপ শব্দ উচ্চারণ করবেঃ আল্লাহু আকবার, আল্লাহ আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ, আশহাদু আনা মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ; হাইয়া আলাস-সালাহ, হাইয়া আলাস-সালাহ; হাইয়া আলাল-ফালাহ, হাইয়া আলাল-ফালাহ আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার। লা ইলাহা রাবী বলেন, অতঃপর ঐ স্থান হতে ঐ ব্যক্তি একটু দুরে সরে গিয়ে দাঁড়ায় এবং বলে- তুমি । যখন নামায পড়তে দাঁড়াবে তখন বলবেঃ। আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার; আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ; আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ; হাইয়া আলাস-সালাহ; হাইয়া আলাল-ফালাহ্; কাদ কামাতিস্ সালাহ; কাদ কামাতিস-সালাহ, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।” অতঃপর ভাের বেলা আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের খিদমতে হাযির হয়ে তাঁর নিকট আমার স্বপ্নের বর্ণনা করি। নবী করীম (স) বলেনঃ এটা অবশ্যই সত্য স্বপ্ন। অতঃপর | তিনি বলেনঃ তুমি বিলালকে ডেকে তােমার সাথে নাও এবং তুমি যেরূপ স্বপ্ন দেখেছ- তদ্রুপ তাকে শিক্ষা দাও যাতে সে (বিলাল) ঐরূপে আযান দিতে পারে। কেননা তাঁর কণ্ঠস্বর তােমার স্বরের চাইতে অধিক উচ্চ। অতঃপর আমি বিলাল (রা)-কে সঙ্গে নিয়ে দাঁড়াই এবং তাঁকে আযানের শব্দগুলি শিক্ষা দিতে থাকি এবং তিনি উচ্চারণ পূর্বক আযান দিতে থাকেন। বিলালের এই আযান-ধনি উমার ইবনুল খাত্তাব (রা) নিজ আবাসে বসে শুনতে পান। তা শুনে উমার (রা) এত দ্রুত পদে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের খিদমতে আগমন করেন যে, তাঁর গায়ের চাদর মাটিতে হেচড়িয়ে যাচ্ছিল। তিনি নবী করীম (স)-এর দরবারে উপস্থিত হয়ে বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহর শপথ! যে মহান সত্তা আপনাকে সত্য নবী হিসেবে প্রেরণ করেছেন, আমিও ঐরূপ স্বপ্ন দেখেছি যেরূপ অন্যরা দেখেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া। সাল্লাম বলেনঃ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য- (ইবন মাজা, তিরমিযী, মুসলিম)। ইমাম আবু দাউদ (রহ) বলেন, সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যাব ও আবদুল্লাহ ইবন যায়েদের সুত্র ইমাম যুহরী (রহ) হতেও এইরূপ হাদীছ বর্ণিত আছে। যুহরী থেকে ইবন ইসহাকের সূত্রে “আল্লাহু আকবার" চারবার উল্লেখ আছে। যুহরী থেকে মামার ও ইউনুসের সূত্রে "আল্লাহু আকবার” দুই বার উল্লেখ আছে, তাঁরা চারবার উল্লেখ করেননি।








৫৯১। উছমান ইবন আবু শায়বা উম্মে ওয়ারাকা বিন্‌তে নাওফাল (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, বদরের যুদ্ধের সময় আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামকে বলি- ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাকে এই যুদ্ধে অংশ গ্রহণের অনুমতি দান করুন, যাতে অমি যুদ্ধাহত সেনানীদের সেবা শুশ্রুষা করার সময় শাহাদাত বরণ করতে পারি। জবাবে তিনি বলেনঃ তুমি স্বগৃহে অবস্থান কর। আল্লাহ্ রব্বল আলামীন তােমাকে শাহাদাত নসীব করবেন। রাবী বলেন, এজন্য তাঁকে শহীদ আখ্যায়িত করা হত। রাবী আরও বলেন, তিনি কুরআন সম্পর্কে বিশেষ অভিজ্ঞ ছিলেন। একদা তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের নিকট আরয করেন যে, তাঁর ঘরে আযানের জন্য যেন একজন মুআযযিন নিযুক্ত করা হয় (মহিলাদের জামাআত কায়েমের উদ্দেশ্যে)। (তার শাহাদাত বরণের ঘটনা এই যে, তিনি তাঁর এক দাস ও এক দাসীকে এই চুক্তিতে আযাদ করেন যে, আমার মৃত্যুর পর তােমরা আযাদ হবে। একদা রাতে তারা (দাস-দাসী) তাঁকে চাদর দিয়ে আবৃত করে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে এবং পালিয়ে চলে যায়। পরদিন সকালে হযরত উমার (রা) তাঁকে মৃত অবস্থায় দেখে সকলের নিকট বলেন, তার নিকট যে দাস-দাসী থাকত তাদের সম্পর্কে তােমাদের যে ব্যক্তি অবগত আছে সে যেন তাদেরকে আমার নিকট হাযির করে। (অতঃপর উপস্থিত করা হলে তারা তাঁকে হত্যা করেছে বলে স্বীকার করে। তখন তাদেরকে শুলিবিদ্ধ করে হত্যা করা হয় এবং মদীনাতে এটাই শুলিবিদ্ধ করে মৃত্যুদন্ডের সর্বপ্রথম ঘটনা।




৫৮৯। মুসাদ্দাদ- মালিক ইবনুল হুয়ায়রিছ (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম তাঁকে অথবা তাঁর সাথীকে বলেনঃ নামাযের সময় উপস্থিত হলে- আযান ও ইকামতের পর তােমাদের মধ্যেকার বয়স্ক ব্যক্তি নামাযে ইমামতি করবে। রাবী মাসলামার হাদীছে উল্লেখ আছে যে, ঐ সময় আমরা সকলেই প্রায় সমান ইলমের অধিকারী ছিলাম। ইসমাঈল হতে বর্ণিত হাদীছে উল্লেখ আছে যে, রাবী খালিদ বলেন, তখন আমি আবু কিলাবকে বলি, 'কুরআনে অধিক অভিজ্ঞ’ এ শব্দটি কেন উল্লেখ করা হয় নাই? তিনি বলেন, মালিক ও তাঁর সাথী উভয়ই কুরআনে সম-জ্ঞানের অধিকারী থাকায় রাসূলুল্লাহ (স) কুরআনের কথা এখানে উল্লেখ করেন নাই (বরং বয়সের কথা বলেছেন)।




৬০১। আল-কানাবী-- আনাস ইবন মালিক (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম ঘােড়ায় আরােহণ করেন। তিনি তার পিঠ থেকে পড়ে যাওয়ায় তাঁর দেহের ডান পার্শ্বে ব্যথা পান। এমতাবস্থায় তিনি বসে নামাযে ইমামতি করেন এবং আমরাও তাঁর পিছনে বসে নামায আদায় করি। নামায শেষে নবী করীম (স) বলেনঃ ইমামকে এজন্যই নিযুক্ত করা হয়েছে যে, তার অনুসরণ করা হয়। অতএব ইমাম যখন দাঁড়িয়ে নামায আদায় করবে তখন তােমরাও দণ্ডায়মান হবে। অতঃপর ইমাম যখন রুকু করবে তখন তােমরাও রুকূ করবে এবং ইমাম যখন মস্তক উত্তোলন করবে তােমরাও মস্তক উঠাবে। অতঃপর ইমাম যখন সামিআল্লাহ লিমান হামিদাহ” বলবে, তখন তােমরা বলবে "রবানা ওয়া লাকাল হামদ।” ইমাম যখন বসে নামায আদায় করবে, তখন তােমরাও বসে নামায আদায় করবে। (বুখারী, মুসলিম, নাসাঈ, তিরমিযী)।



৬০২। উছমান ইবন আবু শায়বা-জাবের (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম মদীনাতে অশ্বপৃষ্ঠে আরােহণের পর তার পিঠ হতে খেজুর কাঠের উপর | পড়ে গিয়ে তিনি পায়ে আঘাত পান। অতঃপর আমরা তাঁকে দেখতে এসে আয়েশা (রা)-র ঘরে তাসবীহ পাঠরত অবস্থায় পাই। রাবী বলেন, আমরা তাঁর পেছনে দাঁড়াই, কিন্তু তাতে তিনি বাধা দেননি। অতঃপর আমরা পুনরায় তাঁকে দেখতে এসে তাঁকে ফরয নামায বসা অবস্থায় আদায় করতে দেখি। আমরা তাঁর পেছনে দাঁড়ালে তিনি আমাদেরকে বসার জন্য ইশারা করায় আমরা বসে যাই। অতঃপর তিনি নামায শেষে বলেন ঃ যখন ইমাম বসে নামায আদায় করবে-তখন তােমরাও বসবে এবং ইমাম যখন ‘দাঁড়িয়ে নামায আদায় করবে তখন তােমরাও দাঁড়াবে এবং পারস্যের অধিবাসীরা তাদের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের সম্মুখে যেমন দাঁড়িয়ে থাকে তােমরা তদুপ করবে না। (ইবন মাজা)।


 ৬১২। আল্-কানাবী- আনাস ইন মালিক (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা তাঁর দাদী হযরত মুলায়কা (রা) রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের জন্য তৈরী খাদ্য খাওয়ার জন্য দাওয়াত করেন। তিনি তা খাওয়ার পর বলেনঃ তােমরা এসাে। আমি তােমাদের নিয়ে নামায পড়ব। আনাস (রা) বলেন, তখন আমি আমাদের অনেক দিনের ব্যবহারে কালাে দাগযুক্ত একটি চাটাইয়ের দিকে উঠে যাই এবং পানি দিয়ে তা পরিষ্কার করি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম তার উপর দাঁড়ান। আমি ও আমার ছােট ভাই তাঁর পেছনে দন্ডায়মান হই এবং বৃদ্ধা মহিলা (মূলায়কা) আমাদের পিছনে দাঁড়ান। তিনি আমাদেরকে সংগে নিয়ে দুই রাকাত নামায আদায়ের পর প্রস্থান করেন। (বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, নাসাঈ)।

No comments

Powered by Blogger.