মহানবি (সা) এর জিবনি পর্ব-১
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহ্মাতুল্লাহ
প্রিয় ভিউয়ার
রাসুলুল্লাহ (সা) এর সম্পর্কে বেশ কিছু কমন ঘটনা আমরা কম বেশি সকলেই জানি । কিন্তু প্রিয় নবি (সা) এর সারা জিবনে ঘটে যাওয়া সবকটি (প্রায়) ঘটনা আমরা কজনই জানি । তাই আজকে থেকে শুরু করে আগামী পর্বগুলিতে আমরা জানব মহানবি (সা) এর জিবনে ঘটে যাওয়া প্রায় সমস্ত উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলির বিস্তারিত বিবরণ ইন্সাল্লাহ ।
মহানবি (সা) এর জীবনী
পর্ব-১ খ্রিষ্টীয় ৬ষ্ঠ শতাব্দীর শুরু থেকেই আরবের বিখ্যাত কুরাইশ বংশের বনি হাসেম শাখা সর্বপ্রকার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছিল । কাবা ঘরের সর্বপ্রকার সেবা পরিসেবার দায়িত্বও বনি হাশেমের উপরই ছিল । কুরাইশের বনি হাসেম শাখার আব্দুল মুক্তালিবের পুত্র আব্দুল্লাহর অরসে আমিনার গর্ভে আখিরি নবি ও রাসুল হজরত মুহাম্মদ মুস্তফা (সা) ৫৭১ খ্রিস্টাব্দের ২০ এপ্রিল মোতাবেক ৯ রবিউল-আওয়াল সোমবার সুবহে-সাদিকের সময় শুভ জন্মগ্রহণ করেন । কেউ কেউ অবশ্য রাসুল (সা) এর জন্মসন ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দ বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন । জগতবাসী এমন কি যেই বংশের গত্রে রাসুলে করিম (সা) জন্ম নিলেন তারাও অবহিত হল না যে - যে মহাপরিত্রাতার জন্য সমগ্র জগৎ অপেক্ষমান , সেই রেসালাত সূর্য সভ্যতা-সংস্কৃতির সাথে পরিচিত 'মরু-আরবের কুরাইশ বংশের হাসিমি শাখার আব্দুল মুক্তালিবের গৃহ উজালা করে আবির্ভূত হয়েছেন ।
এমন একটি শুভদিনকে এমন নিজেদের সৃতিতে ধারন করে রাখা বা ঐতিহাসিক গুরুত্ব প্রদানের যোগ্যতা , শিক্ষা-সংস্কৃতি ও সভ্যতার সাথে সম্পর্কহীন আরববাশীর ছিল নাহ । তাই মহান আল্লাহ নিজের কুদরতে এই দিনটিকে সরণীয় করে রাখতে মোজেজাপুর্ণ একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন প্রকাশ করেন । আর তাহলো "আসহাবে ফিল" অর্থাৎ "হস্তিবাহিনীর ঘটনা" । নির্ভরযোগ্য বর্ণনা সূত্রে প্রমাণিত রাসুলে আকরাম (সা) হস্তিবাহিনীর ধ্বংস হয়ার অল্প কিছুদিন পূর্বে জন্ম নেন । হস্তিবাহিনীর ঘটনা এবং রাসুল (সা) এর জন্মদিনের মাঝখানে ৪০ দিন মতান্তরে ৫০ দিন অতিবাহিত হয়েছিল ।
আসহাবে ফিল-
হস্তিবাহিনীর ধ্বংস আব্দুল মুক্তালিবের জিবনে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা । হস্তিবাহিনীর ঘটনার একটি কেন্দ্রীয় চরিত্র " আব্রাহাতুল আস্রাম " । আব্রাহা ধর্ম বিশ্বাসে খ্রিষ্টান ছিল । হাপ্সা রাজের পক্ষ থেকে সে ইয়ামানের শাসনকর্তা হিসেবে নিজুক্ত হয়েছিল । আব্রাহা খ্রিষ্টান আর আরববাসী পৌত্তলিক সুতরাং আরববাসীর সাহায্য-সহযোগিতার উদ্দেশ্যেই আল্লাহ তায়ালা আব্রাহা বাহিনীর ধ্বংস সাধন করেছিলেন ।
আল্লাহ তায়াল আব্রাহাকে তার বাহিনীসহ ধ্বংসের কারন , আব্রাহার ইচ্ছা ছিল আল্লাহর ইচ্ছার বিপরীত । সে ইয়ামানে অতি সুদর্শন একটি গির্জা তৈরি করে উদ্দেশ্য ছিল খ্রিষ্টধর্মের ত্রিত্ববাদের প্রচার-প্রসার । তার আরেকটি অপবিত্র ইচ্ছা ছিল , তাওহিদের কেন্দ্র কাবার বিপরিতে তার নির্মিত গির্জাকে মানুষের সমাবেশ স্থলে পরিনত করা । অতএব, মানুষের মনে ইয়ামানের নির্মিত গির্জার প্রতি কাবার অনুরূপ সম্মান-মর্যাদা জাগ্রত করতে হলে কাবাঘর ধসিয়ে দেওয়া দরকার ।
এমন একটি অপবিত্র ইচ্ছা থেকেই আব্রাহা কাবাশরিফ ধ্বংসের উদ্দেশ্যে সৈন্য প্রেরণ করে । অন্যদিকে সমগ্র আরব আব্রাহার প্রতিরোধে ছিল সম্পূর্ণ অক্ষম । আব্রাহা সমকালীন সর্বপ্রকার যুদ্ধাস্ত্রের মালিক অথচ কুরাইশ বংশ তথা সমগ্র আরব যুদ্ধাস্ত্রের থেকে পুরোপুরি বঞ্চিত । আব্রাহা বাহিনীর মোকাবেলা করার মত কোনো অস্ত্র-সস্ত্র তাদের হাতে ছিল নাহ । উল্লেখিত পরিস্থিতিতে, কাবা শরিফ রক্ষার জন্য জাগতিক যে উপকরণটুকু অবলম্বন সাব্যস্ত হবার ছিল তা নিস্ফল প্রমানিত হলে আল্লাহর শক্তিমত্তা, প্রভাব-পরাক্রম ও সম্মান-মর্যাদায় দোলা লাগে । জগতবাসী দেখল জাগতিক উপকরণের শক্তিমত্তার উপর ভর করে আল্লাহর কুদরতের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বীতাকারী কিভাবে ধ্বংস হয়েছে । যে তাওহিদের কেন্দ্র কাবা ধ্বংসের জন্য বিশাল বাহিনী সহ আগমন করেছিল , আল্লাহ তাকে ধ্বংস করে কাবাকে নিজের কুদরতের ছায়ায় রেখে হেফাজত করেছেন ।
মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনের সূরা ফিল-এ এই ঘটনা অত্যন্ত মোজেজাপুর্ণ ভঙ্গিতে অতি সংক্ষিপ্ত আকারে বর্ণনা করেছেন । সারকথা , হস্তিবাহিনীর মক্কা আক্রমনের বছরটি রসূল (সা) এর জন্মের বছর ।এই ঘটনা তাঁর পবিত্রতম আবির্ভাবের নিকটতম নিদর্শন ।
রাসুল (সা) এর জন্মতারিখ নির্ধারণের ঐতিহাসিক ও চরিতসাস্ত্র কারের মধ্যে মতভেদ পরিলক্ষিত হয় । সর্বসাধারনে রাসুল(সা) এর জন্মতারিখ ১২ই রবিউল-আওয়াল সোমবার বলে প্রসিদ্ধ একটা মত প্রচলিত রয়েছে । কিছু দুর্বল বর্ণনা " ১২ তারিখ " এর মতেরই সহযোগিতা করে । ঐতিহাসিক তাবারি ইবনে খালদুন ও চরিতশাস্ত্রবিদ ইবনে হেসামু ১২ তারিখের প্রবক্তা । অনেক আলেম ৮ রবিউল আওয়াল বলেও মত প্রকাশ করেছেন । প্রক্ষাত ঐতিহাসিক আবুল ফেদা ১০ই রবিউল-আওয়াল বলে অভিমত প্রসন করেন । প্রখ্যত অলামায়ে কেরাম , ইতিহাস বক্তা ও চরিতশাস্ত্রবিদ্দের মতে রাসুল(সা) ৯ই রবিউল আওয়াল সোমবার জন্মগ্রহণ করেন । শ্রদ্ধেয় ও বরেণ্য ইতিহাসবেক্তা চরিতশাস্ত্রবিদগণ এই মতকেই বিশুদ্ধ এবং প্রামাণ্য বলে অভিমত প্রকাশ করেন । অতএব, হুমাইদি , উকাইলি , ইউনুস ইবনে ইয়াজিদ,ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে হাসেম্ , মোহাম্মদ ইবনে মুশাক হাওয়ারিজমি , আব্দুল খাত্তাব বিন ওয়াজিফ , আল্লামা ইবনে তাইমিয়া , ইবনে কাইয়েম , ইবনে হাজের আস্কালিনি ,সেয়েখ বোদ্রুদ্দিন আইনি , প্রমুখ নেতৃস্থানীয় স্মরণীয় বরণীয় ওলামায়ে কেরাম ৯ রবিউল আওয়াল সোমবার রাসুল(সা) এর জন্ম তারিখ হবার অভিমতই পোষণ করেন ।অথচ অলামায়ে কেরাম , ইতিহাস বক্তা ও চরিতশাস্ত্রবিদ সকলে একমত যে তিনি হস্তিবাহিনির কাবা আক্রমণের বছরের রবিউল-আওয়াল মাসের সোমবার জন্মগ্রহণ করেন । প্রখ্যত শাস্ত্রবিদ আলেম মাহমুদ পাসা ফালাকি রাসুল (সা ) এর যুগ থেকে তাঁর সময়কাল পর্যন্ত ভগুল শাস্ত্রের দৃষ্টিকোণ থেকে চন্দ্রগ্রহণ ও সূর্যগ্রহণ এর একটি তালিকা প্রস্তুত করে ,বিশুদ্ধ হিসাবের মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন যে, রাসুল(সা) এর জন্মতারিখ কোনো প্রকারেই ১২ই রবিউল আওয়াল সোমবার হতে পারে নাহ । তাই শক্তিশালী ও বিশুদ্ধ রেওয়াআত এর পর্যালোচনার আলোকে রাসুল (সা) এর জন্ম তারিখ ৯ই রবিউল আওয়াল সোমবার । প্রসিদ্ধ মতে হস্তিবাহিনি ধ্বংস হয়ে ৫০দিন পর রাসুল (সা) জন্মগ্রহণ করেন ।
রাসুল (সা) আরবের কুরাইশ বংশের হাসেমি শাখায় জন্মগ্রহণ করেন । তাঁর বংশ তালিকা এই রুপঃ
> মোহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল মুক্তালিব বিন হাসেম বিন আব্দে মান্নাফ বিন কুসাই বিন কেলাফ বিন মুররা বিন কাব বিন লুয়াই বিন গালেব বিন ফেররেহ বিন মালেক বিন নজর বিন কেনানাহ বিন খোজাইমা বিন মুরদেকা বিন ইলিয়াছ বিন মুজার বিন নাজার বিন সাদ বিন আদনান ।
মাতার দিক থেকে রাসুল (সা) তাঁর বংশ তালিকা এই রুপঃ
> আমেনা বিন্তে ওয়াহাব বিন আব্দে মান্নাফ বিন জুহ্রা বিন কেলাব । কেলাবের আরেক নাম ছিল হাকিম ।
মুস্লিম শরিফে রাসুল (সা) এর বংশ তালিকা সম্পর্কে যে রেওয়াআত উদ্রিত হয়েছে তাতে তিনি এরশাদ করেন " আল্লাহ তায়ালা ইস্মাইল (আঃ) এর বংশ হতে কেনানাকে বৈশিষ্ট্য দান করেছেন এবং কেনানার মধ্য হতে কুরাইশকে সম্মান মর্যাদা দান করেছেন আবার আবার কুরাইশ থেকে বনি হাসেমকে সম্মান মর্যাদা দান করেছেন এবং বনি হাসেম হতে আমাকে নির্বাচন করেছেন "
আরবের চিরাচরিত প্রথা অনুসারে রাসুল (সা) এর জন্মের ৭ম দিনে কুরাইশ সরদার আব্দুল মুত্তালিব তার পিত্রিহীন নাতীর আকিকার ভোজে অংশ গ্রহনের জন্য সবাইকে দাওয়াত করেন । খাওয়া দাওয়া শেষে আগত মেহমানরা নবজাতকের নাম জিজ্ঞেস করলে আব্দুল মুত্তালিব হরসৎফুল্য চিত্তে উত্তর করলেন মুহাম্মদ । সমাবেত স্বজনরা আশ্রুতপুর্ব ব্যতিক্রমি নাম শুনে বললেন , এমন নাম তোহ আর কখনো শুনিনি । যুগ যুগ ধরে স্বগোত্রে প্রচলিত সব নাম পরিত্যক পুর্বক আপনি এক ব্যতিক্রমি নাম রাখলেন । স্বজনদের আপত্তি পূর্ণ জিজ্ঞাসার জবাবে বৃদ্ধ আব্দুল মুত্তালিব বলেন .....
Post a Comment