সাধারণ জীবনে ব্যবহৃত হাদিস

  [] সহিহ বুখারি- পার্ট-২

এর থেকে হাদিস সমূহ সংগৃহীত []

৪৯৭ |
আবদুল্লাহ ইবন মাসলামা (র.)......
ইন শিহাব (র.) থেকে বর্ণিত,
উমর ইবন আবদুল আযীয (র.) একদিন কোন এক সালাত আদায়ে বিলম্ব করলেন। তখন উরওয়া ইব্‌ন যুবাইর (রা.) তার কাছে গেলেন এবং তার কাছে বর্ণনা করলেন যে, ইরাকে অবস্থানকালে মুগীরা ইন শুবা (রা.) একদিন এক সালাত আদায়ে বিলম্ব করেছিলেন। ফলে আৰূ মাসউদ আনসারী (রা.)
তাঁর নিকট গিয়ে বললেন,
হে মুগীরা ! একি ? তুমি কি অবগত নও যে, 'জিব্রাঈল (আ.) অবতরণ করে সালাত আদায় করলেন, আর রাসূলুল্লাহ (সা) ও সালাত আদায় করলেন। আবার তিনি সালাত আদায় করলেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ও সালাত আদায় করলেন। পুনরায় তিনি সালাত আদায় করলেন এবং রাসূলুল্লাহ (সা) ও সালাত আদায় করলেন। আবার তিনি সালাত আদায় করলেন এবং রাসূলুল্লাহ (সা) ও সালাত আদায় করলেন। পুনরায় তিনি সালাত আদায় করলেন এবং রাসূলুল্লাহ (সা) ও সালাত আদায় করলেন।'
তারপর জিবরাঈল (আ.) বললেন,
"এরই জন্য আমি আদিষ্ট হয়েছি। "
উমর (ইবন আবদুল আযীয) (র.)
উরওয়া (র.)-কে বললেন, “তুমি যা রিওয়ায়াত করছ তা একটু ভেবে দেখ । জিব্রাঈলই কি রাসূলুল্লাহ (সা) এর জন্য সালাতের ওয়াক্ত নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন ?” উরওয়া (র.) বললেন, বাশীর ইব্‌ন আবু মাসউদ (র.) তাঁর পিতা থেকে এরূপই বর্ণনা করতেন। উরওয়া (র.) বলেনঃ
অবশ্য আয়িশা (রা.) আমার কাছে বর্ণনা করেছেন যে,
রাসূলুল্লাহ (সা) না এমন মুহূর্তে আসরের সালাত আদায় করতেন যে, ' সূর্যরশ্মি তখনও তার হুজরার মধ্যে বিরাজমান থাকত। তবে তা উপরের দিকে উঠে যাওয়ার আগেই।'





৫০০ ।
মুসাদ্দাদ (র.)......
হুযাইফা (রা.) থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন,
একদা আমরা উমর (রা.) -এর। কাছে বসা ছিলাম। তখন তিনি বললেন, ফি সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা) -এর বক্তব্য তােমাদের মধ্যে কে স্মরণ রেখেছ ? হযরত হুযাইফা (রা.) বললেন, “যেমনি তিনি বলেছিলেন হুবহু তেমনিই আমি মনে রেখেছি।' উমর (রা.) বললেন, রাসূলুল্লাহ (সা) -এর বাণী স্মরণ রাখার ব্যাপারে তুমি খুব দৃঢ়তার পরিচয় দিচ্ছ। আমি বললাম, (রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছিলেন) মানুষ নিজের পরিবার-পরিজন, ধন-সম্পদ, সন্তানসন্ততি, পাড়া-প্রতিবেশীদের ব্যাপারে যে ফিনায় পতিত হয়- সালাত, সিয়াম, সাদাকা, (ন্যায়ের) আদেশ ও (অন্যায়ের) নিষেধ তা দূরীভূত করে দেয় । হযরত উমর (রা.) বললেন, তা আমার উদ্দেশ্যে নয়। বরং আমি সেই ফিতনার কথা বলছি, যা সমুদ্র তরঙ্গের ন্যায় ভয়াল হবে। হুযাইফা (রা.) বললেন, হে আমীরুল মু'মিনীন! সে ব্যাপারে আপনার ভয়ের কোন কারণ নেই। কেননা, আপনার ও সে ফিনার মাঝখানে একটি বন্ধ দরজা রয়েছে। হযরত উমর (রা.) জিজ্ঞাসা করলেন, সে দরজাটি ভেঙ্গে ফেলা হবে, না খুলে দেওয়া হবে। হুযাইফা (র.) বললেন, ভেঙ্গে ফেলা হবে। উমর (রা.) বললেন, তাহলে তাে আর কোন দিন তা বন্ধ করা যাবে না। [হুযাইফা (রা.)-এর ছাত্র শাকীক (র.) বলেন, আমরা জিজ্ঞাসা করলাম, হযরত উমর (রা.) কি সে দরজাটি সম্পর্কে জানতেন? হুযাইফা (রা.) বললেন, হাঁ, দিনের পূর্বে রাতের আগমন যেমন সুনিশ্চিত, তেমনি নিশ্চিতভাবে তিনি জানতেন। কেননা, আমি তার
কাছে এমন একটি হাদীস বর্ণনা করেছি, যা মােটেও ভুল নয়। (দরজাটি কী) এ বিষয়ে হুযাইফা (রা.)| কে জিজ্ঞাসা করতে আমরা ভয় পাচ্ছিলাম। তাই, আমরা মাসরূক (র.)-কে বললাম এবং তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি বললেন, দরজাটি উমর (রা.) নিজেই।


 ৫০২ ।
আবুল ওয়ালীদ হিশাম ইবন আবদুল মালিক (র.).....
আবু আমর শায়বানী (র.) থেকে বর্ণিত,
তিনি আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা.)-এর বাড়ীর দিকে ইশারা করে বলেন,
এ বাড়ীর মালিক আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন,
আমি রাসূলুল্লাহ্ (সা) -কে জিজ্ঞাসা করলাম,
কোন্ আমল আল্লাহর নিকট অধিক প্রয়? তিনি বললেন, 'যথাসময়ে সালাত আদায় করা। ইবন মাসউদ (রা.) পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, এরপর কোন্‌টি? তিনি বললেন, এরপর পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার। ইবন মাসউদ (রা.) আবার জিজ্ঞাসা করলেন, এরপর কোনটি ? রাসূলুল্লাহ বললেন, এর পর জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ (আল্লাহর পথে জিহাদ)। ইবন মাসউদ (রা.) বলেন, এগুলাে তাে রাসূলুল্লাহ আমাকে বলেছেনই, যদি আমি আরও বেশী জানতে চাইতাম, তাহলে তিনি আরও বলতেন।



৫১০ ।
আলী ইবন আবদুল্লাহ মাদীনী (র.)........
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত,
নবী (সা) বলেছেন :
যখন গরম বৃদ্ধি পায় তখন তােমরা তা কমে এলে (যুহরের) সালাত আদায় করাে। কেননা, গরমের প্রচন্ডতা জাহান্নামের উত্তাপের অংশ।
(তারপর তিনি বলেন), জাহান্নাম তার প্রতিপালকের কাছে এ বলে নালিশ করেছিল, হে আমার প্রতিপালক ! (দহনের প্রচণ্ডতায়) আমার এক অংশ আর এক অংশকে গ্রাস করে ফেলেছে। ফলে আল্লাহ তা'আলা তাকে দু'টি শ্বাস ফেলার অনুমতি দিলেন, একটি শীতকালে আর একটি গ্রীষ্মকালে । আর সে দু'টি হলাে, তােমরা গ্রীষ্মকালে যে প্রচণ্ড উত্তাপ এবং শীতকালে যে প্রচণ্ড ঠান্ডা অনুভব কর তাই।



৫১২ |
আদম ইব্ন আবু ইয়াস (র.)........
আবু যার (রা.) থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন, এক সফরে আমরা রাসূলুল্লাহ্ (সা) -এর সঙ্গে ছিলাম। এক সময় মুয়াযিন যুহরের আযান দিতে চেয়েছিল। তখন নবী (সা) বললেন ঃ গরম কমতে দাও। কিছুক্ষণ পর আবার মুয়াযিন আযান দিতে চাইলে নবী ও (পুনরায়) বললেন ঃ গরম কমতে দাও। এভাবে তিনি (সালাত আদায়ে) এত বিলম্ব করলেন যে, আমরা। টিলাগুলাের ছায়া দেখতে পেলাম । তারপর নবী (সা) বললেন ঃ গরমের প্রচন্ডতা জাহান্নামের উত্তাপ থেকে। কাজেই গরম প্রচন্ড হলে উত্তাপ কমার পর সালাত আদায় করাে। ইবন আব্বাস (রা.) বলেন, হাদীসে : শব্দটি 'ও ঝুঁকে পড়া, গড়িয়ে পড়ার অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।


৫১৪|
হাফ ইবন উমর (র.).....
আবু বারযা (রা.) থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন, নবী (সা) এমন সময় ফজরের সালাত আদায় করতেন, যখন আমাদের একজন তার পার্শ্ববর্তী অপরজনকে চিনতে পারত। আর এ সালাতে তিনি ষাট থেকে একশ’ আয়াত তিলাওয়াত করতেন এবং যুহরের সালাত আদায় করতেন যখন সূর্য পশ্চিম দিকে ঢলে পড়ত। তিনি আসরের সালাত আদায় করতেন এমন সময় যে, আমাদের কেউ মদীনার শেষ প্রান্তে পৌঁছে আবার ফিরে আসতে পারত, তখনও সূর্য সতেজ থাকত।
রাবী বলেন, মাগরিব সম্পর্কে তিনি (আবু বারযা (রা.)] কী বলেছিলেন, আমি তা ভুলে গেছি। আর ইশার সালাত রাতের এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত পিছিয়ে নিতে তিনি কোনরূপ দ্বিধাবােধ করতেন না। তারপর রাবী বলেন, রাতের অর্ধাংশ পর্যন্ত পিছিয়ে নিতে অসুবিধা বােধ করতেন না। আর মু'আয (র.) বর্ণনা করেন যে, 'বা (র.) বলেছেন, পরে আবুল মিনহালের (র.) সংগে সাক্ষাত হয়েছিল, সে সময় তিনি বলেছেন, রাতের এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত বিলম্ব করতে অসুবিধা বােধ করতেন না।



 ৫৩০|
আবদুল আযীয ইবন আবদুল্লাহ (র.).......
সালিম ইবন আবদুল্লাহ (র.) তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে,
তিনি রাসূলুল্লাহ (সা) কে বলতে শুনেছেন যে, পুর্বেকার উম্মাতের স্থায়িত্বের তুলনায় তােমাদের স্থায়িত্ব হল আসর থেকে নিয়ে সূর্য অস্ত যাওয়ার মধ্যবর্তী সময়ের অনুরূপ। তাওরাত অনুসারীদেরকে তাওরাত দেওয়া হয়েছিল। তারা তদনুসারে কাজ করতে লাগল; যখন দুপুর হলাে, তখন তারা অপারগ হয়ে পড়ল। তাদের এক এক কীরাত করে পারিশ্রমিক প্রদান করা হয়। তারপর ইন জীল অনুসারীদেরকে ইনুজীল দেওয়া হল। তারা আসরের সালাত পর্যন্ত কাজ করে অপারগ হয়ে পড়ল। তাদেরকে এক এক কীরাত করে পারিশ্রমিক দেওয়া হল। তারপর আমাদেরকে কুরআন দেওয়া হল। আমরা সূর্যাস্ত পর্যন্ত কাজ করলাম। আমাদের দুই দুই কীরাত' করে দেওয়া হল। এতে উভয় কিতাবী। সম্প্রদায় বলল, হে আমাদের প্রতিপালক! তাদের দুই দুই কীরাত' করে দান করেছেন, আর আমাদের দিয়েছেন এক এক কীরাত করে; অথচ আমলের দিক দিয়ে আমরাই বেশী । আল্লাহ তা'আলা বললেনঃ তােমাদের পারিশ্রমিকের ব্যাপারে আমি কি তােমাদের প্রতি কোনরূপ যুলুম করেছি। তারা বলল, না। তখন আল্লাহ তা'আলা বললেন : এ হলাে, আমার অনুগ্রহ যাকে ইচ্ছা তাকে দেই।

No comments

Powered by Blogger.