বাংলা হাদিস ( সহিহ বুখারি )

  

 [] সহিহ বুখারি- 
এর থেকে হাদিস সমূহ সংগৃহীত []

 





২৫১১। সাঈদ ইব্‌ন আবু মারয়াম (র)......... সাহ্ল‌ ইব্ন‌ সা'দ (রা) থেকে বর্ণিত যে, আম্‌র ইব্ন‌ আউফ গােত্রের কিছু লােকের মধ্যে সামান্য বিবাদ ছিল। তাই নবী (সাল্লাল্লাহু ওয়ালাইহি ওয়াসাল্লাম ) তাঁর সাহাবীগণের একটি জামাআত নিয়ে তাদের মধ্যে আপস-মীমাংসা করে দেওয়ার জন্য সেখানে গেলেন। এদিকে সালাতের সময় হয়ে গেল। কিন্তু নবী (সাল্লাল্লাহু ওয়ালাইহি ওয়াসাল্লাম ) মসজিদে নববীতে এসে পৌঁছেন নি। বিলাল (রা) সালাতের আযান দিলেন, কিন্তু নবী (সাল্লাল্লাহু ওয়ালাইহি ওয়াসাল্লাম ) তখনও এ
সে পেীছেন নি। পরে বিলাল (রা) আবু বকর (রা)এর কাছে এসে বললেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ওয়ালাইহি ওয়াসাল্লাম ) কাজে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এদিকে সালাতেরও সময় হয়ে গেছে। আপনি কি সালাতে লােকদের ইকামত করবেন?' তিনি বললেন, "'হ্যাঁ, তুমি যদি ইচ্ছা কর।" তারপর বিলাল (রা) সালাতের ইকামত বললেন, আর আবু বকর (রা) এগিয়ে গেলেন। পরে নবী (সাল্লাল্লাহু ওয়ালাইহি ওয়াসাল্লাম ) এলেন এবং কাতারগুলাে অতিক্রম করে প্রথম কাতারে এসে দাঁড়ালেন। (তা দেখে) লােকেরা হাততালি দিতে শুরু করল এবং তা অধিক মাত্রায় দিতে লাগল। আবু বকর (রা) সালাত অবস্থায় কোন দিকে তাকাতেন না, কিন্তু (হাততালির কারণে) তিনি তাকিয়ে দেখতে পেলেন যে, নবী তার পেছনে দাঁড়িয়েছেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ওয়ালাইহি ওয়াসাল্লাম ) তাকে হাতের ইশারায় আগের ন্যায় সালাত আদায় করে যেতে নির্দেশ দিলেন। আবু বকর (রা) তার দু'হাত উপরে তুলে আল্লাহর হামদ বর্ণনা করলেন। তারপর কিবলার দিকে মুখ রেখে পেছনে ফিরে এসে কাতারে শামিল হলেন। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ওয়ালাইহি ওয়াসাল্লাম ) আগে বেড়ে লােকদের ইমামত করলেন এবং সালাত সমাপ্ত করে লােকদের দিকে ফিরে বললেন, “হে লােক সকল! সালাত অবস্থায় তােমাদের কিছু ঘটলে তােমার হাততালি দিতে শুরু কর। অথচ হাততালি দেওয়া মহিলাদের কাজ। সালাত অবস্থায় কারাে কিছু ঘটলে সে যেন সুবহানাল্লাহ সুবহানাল্লাহ বলে। কেননা, এটা শুনলে কেউ তার দিকে দৃষ্টিপাত না করে পারতাে না।' 'হে আবু বকর ! তােমাকে যখন ইশারা করলাম, 'তখন সালাত আদায় করাতে তােমার কিসের বাধা ছিল?' তিনি বললেন, 'আবু কুহাফার পুত্রের জন্য শােভা পায় না নবী (সাল্লাল্লাহু ওয়ালাইহি ওয়াসাল্লাম ) -এর সামনে ইমামত করা।









২৫১৯ |
উবায়দুল্লাহ ইবন মূসা (র)......
বারা' (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
যিলকদ মাসে নবী (সাল্লাল্লাহু ওয়ালাইহি ওয়াসাল্লাম ) উমরার উদ্দেশ্যে বের হলেন। কিন্তু মক্কাবাসীরা তাঁকে মক্কা প্রবেশের জন্য ছেড়ে দিতে অস্বীকার করলঅবশেষে এই শর্তে তাদের সাথে ফয়সালা করলেন যে, তিন দিন সেখানে অবস্থান করবেন। সন্ধিপত্র লিখতে গিয়ে মুসলিমরা লিখলেন, এ সন্ধিপত্র সম্পাদন করেছেন, আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ওয়ালাইহি ওয়াসাল্লাম ) ' তারা (মুশরিকরা) বলল, “আমরা তার রিসালাত স্বীকার করি না। আমরা যদি একথাই মনে করতাম যে, আপনি আল্লাহর রাসূল| তাহলে আপনাকে বাধা দিতাম না। তবে আপনি হলেন, আবদুল্লাহ্র পুত্র মুহাম্মদ। তিনি বললেন, 'আমি আল্লাহর রাসূল এবং আবদুল্লাহর পুত্র মুহাম্মদ। তারপর তিনি আলীকে বললেন, রাসূলুল্লাহ শব্দটি মুছে দাও। তিনি বললেন, না। আল্লাহর কসম, আমি আপনাকে (রাসূলুল্লাহ শব্দটি) কখনাে মুছব না।' রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ওয়ালাইহি ওয়াসাল্লাম ) - তখন চুক্তিপত্রটি নিলেন এবং লিখলেন, 'এ সন্ধিপত্র মুহাম্মদ ইবন আবদুল্লাহ সম্পন্ন করেন-খাপবদ্ধ অস্ত্র ছাড়া আর কিছু নিয়ে তিনি মক্কায় প্রবেশ করবেন না। ক্কাবাসীদের কেউ তাঁর সঙ্গে যেতে চাইলে তিনি বের করে দিবেন না। আর তাঁর সঙ্গীদের কেউ মক্কায় থাকতে চাইলে তাকে বাধা দিবেন না।' (সন্ধির শর্ত মুতাবেক) তিনি যখন মক্কায় প্রবেশ করলেন এবং নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হয়ে গেল, তখন তারা এসে আলীকে বলল, তােমার সঙ্গীকে আমাদের এখান থেকে বের হতে বল। কেননা নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হয়ে গেছে।' নবী (সাল্লাল্লাহু ওয়ালাইহি ওয়াসাল্লাম ) রওয়ানা হলেন। তখন হামযার মেয়ে হে চাচা, হে চাচা, বলে তাদের পেছনে পেছনে চলল। আলী (রা) তাকে হাত ধরে নিয়ে এলেন এবং ফাতিমাকে বললেন, এই নাও, তােমার চাচার মেয়েকে। আমি ওকে তুলে এনেছি।' আলী, যায়দ ও জাফর তাকে নেওয়ার ব্যাপারে বির্তকে প্রবৃত্ত হলেন। আলী (রা) বললেন, 'আমি তার বেশী হকদার। কারণ সে আমার চাচার মেয়ে। জাফর (রা) বললেন, সে আমার চাচার মেয়ে এবং তার খালা আমার স্ত্রী।' যায়দ (রা) বললেন, সে আমার ভাইয়ের মেয়ে। এরপর নবী (সাল্লাল্লাহু ওয়ালাইহি ওয়াসাল্লাম )খালার অনুকূলে ফয়সালা দিলেন এবং বললেন, ‘খালা মায়ের স্থলবর্তিনী। আর আলীকে বললেন, “আমি তােমার এবং তুমি আমার।' জাফরকে বললেন, 'তুমি আকৃতি ও প্রকৃতিতে আমার সদৃশ। আর যায়দকে বললেন, 'তুমি তাে আমাদের ভাই ও আযাদকৃত গােলাম।'

৫০০ ।
মুসাদ্দাদ (র.)......
হুযাইফা (রা.) থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন,
একদা আমরা উমর (রা.) -এর। কাছে বসা ছিলাম। তখন তিনি বললেন, ফি সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা) -এর বক্তব্য তােমাদের মধ্যে কে স্মরণ রেখেছ ? হযরত হুযাইফা (রা.) বললেন, “যেমনি তিনি বলেছিলেন হুবহু তেমনিই আমি মনে রেখেছি।' উমর (রা.) বললেন, রাসূলুল্লাহ (সা) -এর বাণী স্মরণ রাখার ব্যাপারে তুমি খুব দৃঢ়তার পরিচয় দিচ্ছ। আমি বললাম, (রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছিলেন) মানুষ নিজের পরিবার-পরিজন, ধন-সম্পদ, সন্তানসন্ততি, পাড়া-প্রতিবেশীদের ব্যাপারে যে ফিনায় পতিত হয়- সালাত, সিয়াম, সাদাকা, (ন্যায়ের) আদেশ ও (অন্যায়ের) নিষেধ তা দূরীভূত করে দেয় । হযরত উমর (রা.) বললেন, তা আমার উদ্দেশ্যে নয়। বরং আমি সেই ফিতনার কথা বলছি, যা সমুদ্র তরঙ্গের ন্যায় ভয়াল হবে। হুযাইফা (রা.) বললেন, হে আমীরুল মু'মিনীন! সে ব্যাপারে আপনার ভয়ের কোন কারণ নেই। কেননা, আপনার ও সে ফিনার মাঝখানে একটি বন্ধ দরজা রয়েছে। হযরত উমর (রা.) জিজ্ঞাসা করলেন, সে দরজাটি ভেঙ্গে ফেলা হবে, না খুলে দেওয়া হবে। হুযাইফা (র.) বললেন, ভেঙ্গে ফেলা হবে। উমর (রা.) বললেন, তাহলে তাে আর কোন দিন তা বন্ধ করা যাবে না। [হুযাইফা (রা.)-এর ছাত্র শাকীক (র.) বলেন, আমরা জিজ্ঞাসা করলাম, হযরত উমর (রা.) কি সে দরজাটি সম্পর্কে জানতেন? হুযাইফা (রা.) বললেন, হাঁ, দিনের পূর্বে রাতের আগমন যেমন সুনিশ্চিত, তেমনি নিশ্চিতভাবে তিনি জানতেন। কেননা, আমি তার
কাছে এমন একটি হাদীস বর্ণনা করেছি, যা মােটেও ভুল নয়। (দরজাটি কী) এ বিষয়ে হুযাইফা (রা.)| কে জিজ্ঞাসা করতে আমরা ভয় পাচ্ছিলাম। তাই, আমরা মাসরূক (র.)-কে বললাম এবং তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি বললেন, দরজাটি উমর (রা.) নিজেই।


 ২৫২২ ।
মুহাম্মদ ইবন আবদুল্লাহ্ আনসারী (র).... আনাস (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রুবাইয়্যি বিনতে নায়র (রা) এক কিশােরীর সামনের দাঁত ভেঙ্গে ফেলেছিল। তারা ক্ষতিপূরণ দাবী করল আর অপর পক্ষ ক্ষমা চাইল। তারা অস্বীকার করল এবং নবী (সাল্লাল্লাহু ওয়ালাইহি ওয়াসাল্লাম ) এর কাছে এল। তিনি কিসাসের নির্দেশ দিলেন। আনাস ইন নার (রা) তখন বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! রুবাইয়্যি-এর দাঁত ভাঙ্গা হবে ? না , যিনি আপনাকে সত্য সহ
পাঠিয়েছেন তার কসম তার দাঁত ভাঙ্গা হবে না।' তিনি বললেন, হে আনাস, আল্লাহর বিধান হল কিসাস।' | তারপর বাদীপক্ষ রাযী হয় এবং ক্ষমা করে দেয়। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ওয়ালাইহি ওয়াসাল্লাম )বললেন, আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে এমন বান্দাও রয়েছেন যে, আল্লাহর নামে কোন কসম করলে তা পূরণ করেন। ফাযারী (র) হুমায়দ (র) সূত্রে আনাস (রা) থেকে রিওয়ায়াত করতে গিয়ে অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন যে, তখন লােকেরা সম্মত হল এবং ক্ষতিপূরণ গ্রহণ করল।


No comments

Powered by Blogger.