বাংলা হাদিস

  






 [] সহিহ বুখারি- ও মুস্লিম শরিফ
এর থেকে হাদিস সমূহ সংগৃহীত []

 

৪৪৬। উসমান এর আযাদকৃত গােলাম হুমরান থেকে বর্ণিত। তিনি উসমান ইবনে আফফান-কে দেখেছেন তিনি ওযুর জন্য এক পাত্র পানি আনিয়ে দু'হাতের ওপর ঢেলে তিনবার ধুলেন। তারপর ডানহাত পানির পাত্রে প্রবেশ করিয়ে কুলি করলেন এবং নাকে পানি দিলেন, এরপর তিনবার মুখমণ্ডল এবং তিনবার দু'হাতের কনুই পর্যন্ত ধুলেন। পরে মাথা মাসহু করলেন। অতঃপর দু’পা (গােড়ালী পর্যন্ত) তিনবার ধুয়ে বললেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার এই ওযুর ন্যায় ওযু করার পর একাগ্রচিত্তে দুরাআত নামায পড়বে এবং এ সময় অন্য কোন ধারণা তার অন্তরে উদয় হবে না। তাহলে তার পূর্বকৃত সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।

 ৪৪৭। উসমান ইবনে আফফান-এর আযাদকৃত দাস হুমৃরান থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন উসমান ইবনে আফফান মসজিদের আঙ্গিনায় ছিলেন। আমি শুনলাম আসর নামাযের সময় মুয়াযিন তাঁর নিকট আসলে তিনি ওযুর পানি চাইলেন এবং ওযু করে বললেন ঃ আল্লাহর কসম! আমি অবশ্যই তােমাদেরকে একটি হাদীস বর্ণনা করবাে, যদি আল্লাহর কিতাবে একটি আয়াত না থাকতাে তাহলে আমি হাদীসটি তােমাদের কাছে বর্ণনা করতাম না (অতঃপর তিনি বললেন) আমি রাসূলুল্লাহ্ (সা)-কে বলতে শুনেছি, কোনাে মুসলিম উত্তমরূপে ওযু করে নামায পড়লে পরবর্তী ওয়াক্তের নামায পর্যন্ত তার সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়।



 ৪৪৯। হুমরান থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ যখন উসমান ওযু করলেন তখন বললেন : আল্লাহর শপথ! আমি অবশ্যই তােমাদের কাছে একটি হাদীস বর্ণনা করবাে। আল্লাহর শপথ। যদি আল্লাহর কিতাবের মধ্যে একটি আয়াত উল্লেখ না থাকতাে তাহলে আমি তােমাদেরকে তা শুনাতাম না । আমি রাসূলুল্লাহ্ (সা)-কে বলতে শুনেছি, কোন ব্যক্তি যখন উত্তমরূপে ওযু করে নামায পড়ে তখন পরবর্তী ওয়াক্তের নামায পর্যন্ত তার সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। উরওয়া বলেছেন, আয়াতটি হচ্ছে ? আমি যেসব স্পষ্ট নির্দেশিকা ও বিধান নাযিল করেছি যারা তা গােপন করে তাদের প্রতি আল্লাহ ও সব লানতকারী লানত করে থাকে। আল্লাহর বাণী লায়েনুন পর্যন্ত।


 ৪৫৩। জামে' ইবনে শাদ্দাদ আবু সাখরা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন : আমি হুমরান ইবনে আবান কে বলতে শুনেছি। তিনি বলেছেন ঃ আমি উসমান এর জন্যে ওযুর পানির ব্যবস্থা করতাম। এমন একটি দিনও অতিবাহিত হতােনা যেদিন সামান্য পরিমাণ পানি হলেও তা দ্বারা গােসল করতেন না। 'উসমান বলেছেন, একদিন আমরা যখন এই (ওয়াক্তের) নামায শেষ করলাম তখন রাসূলুল্লাহ (সা) আমাদেরকে বললেন। মিসআ'র বলেন ঃ আমার হনে হয় তা ছিলাে আসরের নামায। তিনি বললেনঃ আমি স্থির করতে পারছিনা যে, তােমাদেরকে একটি বিষয়ে কিছু বর্ণনা করবাে না নীরব থাকব। তখন আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! যদি তা কল্যাণকর হয় তাহলে আমাদেরকে বলুন। আর যদি অন্য রকম কিছু হয়, তাহলে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই অধিক অবগত। এরপরে তিনি বললেনঃ আল্লাহ তাআলা যেভাবে আদেশ করেছেন যদি কোনাে মুসলমান সেইভাবে পবিত্রতা অর্জন করে পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করে, তাহলে এসব নামাযের মধ্যবর্তী সময়ের সব গুনাহ মাফ হয়ে যায়।
_________________________________________________________ * অনেক সাহাবাই হযরত উসমান (রা)-র এই ওযু দেখেছিলেন। কিন্তু কেউই কোন দ্বিমত পােষণ করেননি। সুতরাং এটি ইজমা হিসেবে পরিগণিত হয়েছে।



৫০০ ।
মুসাদ্দাদ (র.)......
হুযাইফা (রা.) থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন,
একদা আমরা উমর (রা.) -এর। কাছে বসা ছিলাম। তখন তিনি বললেন, ফি সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা) -এর বক্তব্য তােমাদের মধ্যে কে স্মরণ রেখেছ ? হযরত হুযাইফা (রা.) বললেন, “যেমনি তিনি বলেছিলেন হুবহু তেমনিই আমি মনে রেখেছি।' উমর (রা.) বললেন, রাসূলুল্লাহ (সা) -এর বাণী স্মরণ রাখার ব্যাপারে তুমি খুব দৃঢ়তার পরিচয় দিচ্ছ। আমি বললাম, (রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছিলেন) মানুষ নিজের পরিবার-পরিজন, ধন-সম্পদ, সন্তানসন্ততি, পাড়া-প্রতিবেশীদের ব্যাপারে যে ফিনায় পতিত হয়- সালাত, সিয়াম, সাদাকা, (ন্যায়ের) আদেশ ও (অন্যায়ের) নিষেধ তা দূরীভূত করে দেয় । হযরত উমর (রা.) বললেন, তা আমার উদ্দেশ্যে নয়। বরং আমি সেই ফিতনার কথা বলছি, যা সমুদ্র তরঙ্গের ন্যায় ভয়াল হবে। হুযাইফা (রা.) বললেন, হে আমীরুল মু'মিনীন! সে ব্যাপারে আপনার ভয়ের কোন কারণ নেই। কেননা, আপনার ও সে ফিনার মাঝখানে একটি বন্ধ দরজা রয়েছে। হযরত উমর (রা.) জিজ্ঞাসা করলেন, সে দরজাটি ভেঙ্গে ফেলা হবে, না খুলে দেওয়া হবে। হুযাইফা (র.) বললেন, ভেঙ্গে ফেলা হবে। উমর (রা.) বললেন, তাহলে তাে আর কোন দিন তা বন্ধ করা যাবে না। [হুযাইফা (রা.)-এর ছাত্র শাকীক (র.) বলেন, আমরা জিজ্ঞাসা করলাম, হযরত উমর (রা.) কি সে দরজাটি সম্পর্কে জানতেন? হুযাইফা (রা.) বললেন, হাঁ, দিনের পূর্বে রাতের আগমন যেমন সুনিশ্চিত, তেমনি নিশ্চিতভাবে তিনি জানতেন। কেননা, আমি তার
কাছে এমন একটি হাদীস বর্ণনা করেছি, যা মােটেও ভুল নয়। (দরজাটি কী) এ বিষয়ে হুযাইফা (রা.)| কে জিজ্ঞাসা করতে আমরা ভয় পাচ্ছিলাম। তাই, আমরা মাসরূক (র.)-কে বললাম এবং তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি বললেন, দরজাটি উমর (রা.) নিজেই।







২৫১৯ |
উবায়দুল্লাহ ইবন মূসা (র)......
বারা' (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
যিলকদ মাসে নবী (সাল্লাল্লাহু ওয়ালাইহি ওয়াসাল্লাম ) উমরার উদ্দেশ্যে বের হলেন। কিন্তু মক্কাবাসীরা তাঁকে মক্কা প্রবেশের জন্য ছেড়ে দিতে অস্বীকার করলঅবশেষে এই শর্তে তাদের সাথে ফয়সালা করলেন যে, তিন দিন সেখানে অবস্থান করবেন। সন্ধিপত্র লিখতে গিয়ে মুসলিমরা লিখলেন, এ সন্ধিপত্র সম্পাদন করেছেন, আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ওয়ালাইহি ওয়াসাল্লাম ) ' তারা (মুশরিকরা) বলল, “আমরা তার রিসালাত স্বীকার করি না। আমরা যদি একথাই মনে করতাম যে, আপনি আল্লাহর রাসূল| তাহলে আপনাকে বাধা দিতাম না। তবে আপনি হলেন, আবদুল্লাহ্র পুত্র মুহাম্মদ। তিনি বললেন, 'আমি আল্লাহর রাসূল এবং আবদুল্লাহর পুত্র মুহাম্মদ। তারপর তিনি আলীকে বললেন, রাসূলুল্লাহ শব্দটি মুছে দাও। তিনি বললেন, না। আল্লাহর কসম, আমি আপনাকে (রাসূলুল্লাহ শব্দটি) কখনাে মুছব না।' রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ওয়ালাইহি ওয়াসাল্লাম ) - তখন চুক্তিপত্রটি নিলেন এবং লিখলেন, 'এ সন্ধিপত্র মুহাম্মদ ইবন আবদুল্লাহ সম্পন্ন করেন-খাপবদ্ধ অস্ত্র ছাড়া আর কিছু নিয়ে তিনি মক্কায় প্রবেশ করবেন না। ক্কাবাসীদের কেউ তাঁর সঙ্গে যেতে চাইলে তিনি বের করে দিবেন না। আর তাঁর সঙ্গীদের কেউ মক্কায় থাকতে চাইলে তাকে বাধা দিবেন না।' (সন্ধির শর্ত মুতাবেক) তিনি যখন মক্কায় প্রবেশ করলেন এবং নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হয়ে গেল, তখন তারা এসে আলীকে বলল, তােমার সঙ্গীকে আমাদের এখান থেকে বের হতে বল। কেননা নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হয়ে গেছে।' নবী (সাল্লাল্লাহু ওয়ালাইহি ওয়াসাল্লাম ) রওয়ানা হলেন। তখন হামযার মেয়ে হে চাচা, হে চাচা, বলে তাদের পেছনে পেছনে চলল। আলী (রা) তাকে হাত ধরে নিয়ে এলেন এবং ফাতিমাকে বললেন, এই নাও, তােমার চাচার মেয়েকে। আমি ওকে তুলে এনেছি।' আলী, যায়দ ও জাফর তাকে নেওয়ার ব্যাপারে বির্তকে প্রবৃত্ত হলেন। আলী (রা) বললেন, 'আমি তার বেশী হকদার। কারণ সে আমার চাচার মেয়ে। জাফর (রা) বললেন, সে আমার চাচার মেয়ে এবং তার খালা আমার স্ত্রী।' যায়দ (রা) বললেন, সে আমার ভাইয়ের মেয়ে। এরপর নবী (সাল্লাল্লাহু ওয়ালাইহি ওয়াসাল্লাম )খালার অনুকূলে ফয়সালা দিলেন এবং বললেন, ‘খালা মায়ের স্থলবর্তিনী। আর আলীকে বললেন, “আমি তােমার এবং তুমি আমার।' জাফরকে বললেন, 'তুমি আকৃতি ও প্রকৃতিতে আমার সদৃশ। আর যায়দকে বললেন, 'তুমি তাে আমাদের ভাই ও আযাদকৃত গােলাম।'

No comments

Powered by Blogger.